বাংলা রচনা
সমগ্র
চলচ্চিত্র ও তার ভূমিকা
(সংকেত: ভূমিকা; চলচ্চিত্রের ইতিহাস; বাংলাদেশ ও চলচ্চিত্র; চলচ্চিত্রের ভূমিকা; বিনোদন দান একাকীত্ব দূরীকরণ; শিক্ষাদান; সংস্কৃতি আদান-প্রদান; মননশীলতা ও ব্যক্তিত্ব গঠন; ফ্যাশন সচেতন; নৈতিক চরিত্র গঠন; উৎসাহ-উদ্দীপনায়; চলচ্চিত্রের নেতিবাচক দিক; উপসংহার।)ভূমিকা:
-লেলিন (১৯১৭)
বাংলাদেশ ও চলচ্চিত্র: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনক আব্দুল জব্বার খান। বাংলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ৩ আগস্ট, ১৯৫৬ সালে। নির্মিত চলচ্চিত্রের নাম ‘মুখ ও মুখোশ’ এবং এরই পরিচালক ছিলেন আব্দুল জব্বার খান। বাংলাদেশের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’। ১৯৭০ সালে জহির রায়হান এটি নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্র উন্নয়নে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন তৈরি করা হয় ১৯৫৭ সালে।
চলচ্চিত্রের ভূমিকা: চলচ্চিত্র এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে গণমানুষের কাছে খুব সহজেই বার্তা পৌঁছানো যায়। আর এই চলচ্চিত্র যদি কোনো ধর্মীয় বিষয় নিয়ে হয় তবে সেই চলচ্চিত্র হয় অনেক আবেগস্পর্শী। মানব জীবনে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আজ চলচ্চিত্রের প্রতি ব্যাকুল। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পে এসেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। নিম্নে চলচ্চিত্রের ভূমিকা আলোকপাত করা হলো-
বিনোদনদান: চলচ্চিত্রের প্রধান উদ্দেশ্যে হলো মানুষকে বিনোদিত করা। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষ নানামাত্রিক বিনোদন গ্রহণ করে। প্রতিটি চলচ্চিত্রেই হাসি, কান্না, কৌতুক, ইতিহাস, ঐতিহ্য মিশ্রিত থাকে।
একাকীত্ব দূরীকরণ: মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব। কিন্তু আধুনিক ব্যস্ত নগরজীবনে মানুষ একাকীত্ববোধ করে। আর এই একাকীত্ববোধ দূরীকরণে চলচ্চিত্রের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষ শুধু বিনোদনই পায় না এটি তার একাকীত্ববোধও দূর করে দেয়।
শিক্ষাদান: চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের নানা প্রান্তের বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ শিক্ষা লাভ করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্মিত চলচ্চিত্র দেখার ফলে সেসব দেশের ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে আমরা জ্ঞান লাভ করতে পারি। বিদেশি ভাষা শিখতে পারে।
সংস্কৃতি আদান-প্রদান: চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের নানা সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারে মানুষ। এক দেশের মানুষ অন্যদেশের চলচ্চিত্র দেখার মাধ্যমে সে দেশের কৃষ্টি-কালচার, ঐতিহ্য, পোশাকসহ সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। এর ফলে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সংস্কৃতির আদান-প্রদান ঘটতে পারে।
মননশীলতা ও ব্যক্তিত্ব গঠন: ব্যক্তির মননশীলতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনেও চলচ্চিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। চলচ্চিত্র দেখার মাধ্যমে ব্যক্তির চিন্তার জগত, আবেগ, অনুভূতি, সবকিছুর পরিবর্তন ঘটতে পারে। চলচ্চিত্র উন্নত ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠনে সাহায্য করে।
ফ্যাশন সচেতনে: মানুষের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উপর চলচ্চিত্রের প্রভাব ব্যাপক। প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীর ফ্যাশন অনুকরণ, প্রিয় তারকাদের মতো হেয়ার স্টাইলও করেন এ যুগের তরুণ-তরুণীরা।
নৈতিক চরিত্র গঠন:ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র গঠনেও রয়েছে চলচ্চিত্রের ভূমিকা। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্নভাবে নিজের নৈতিক চরিত্রকে সাজাতে পারে। বর্তমান বিশ্বে মানুষ অনেকটা সময়ই ব্যয় করে এই চলচ্চিত্রের পিছনে। ব্যস্ত নগরজীবনের ক্লান্তি দূর করতে কিংবা সামাজিক উৎসবে অথবা বিনোদনের জন্য বন্ধু-বান্ধব মিলে ছুটে চলে চলচ্চিত্র দেখতে। এর ফলে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া আরো শক্তিশালী হয় এবং নৈতিক ভিত্তিও সুদৃঢ় হয়।
উৎসাহ উদ্দীপনায়: ব্যক্তি জীবনে উৎসাহ ও উদ্দীপনা জোগাতে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্মিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র বাঙালিদের সংগ্রামে উৎসাহ জোগায়, নতুনভাবে সংগ্রামে উদ্দীপনা তৈরি করে। এগুলোর মধ্যে জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’, আলমগীর কবিরের ‘লিবারেশন ফাইটর্স’, বাবুল চৌধুরীর ‘ইনোসেন্ট মিলিয়ন’, খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্রের নেতিবাচক দিক: চলচ্চিত্রের ইতিবাচক ভূমিকা অপরিসীম হলেও এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। যেমন চলচ্চিত্রের সহিংস দৃশ্য শিশু মনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। বর্তমানে শিশুরা অতিমাত্রায় চলচ্চিত্র মুখী হয়ে পড়ছে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আসা উন্নত দেশের সংস্কৃতির কারণে দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রীতি-নীতি আজ হুমকির মুখে। চলচ্চিত্রের এসব নেতিবাচক ভূমিকাকে অনেকে চলচ্চিত্রের আগ্রাসন বলে উল্লেখ করেন। তাছাড়া চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা মানুষের নৈতিক স্খলন ঘটায়। যা তরুণ সমাজকে বিপথগামী করছে। এছাড়া নারীকেও চলচ্চিত্রে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন চলচ্চিত্রের অন্যতম নেতিবাচক দিক।
উপসংহার: আধুনিক বিশ্বের গণমাধ্যমের অন্যতম একটি উপাদন হলো চলচ্চিত্র। মানুষের উপর চলচ্চিত্রের প্রভাব অপরিসীম। এই প্রভাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পড়তে পারে। মেলোড্রামা, রোমান্টিক, অ্যাকশন, ওয়েস্টার্ন, কমেডি নানা ধরণের চলচ্চিত্র মানুষকে বিনোদিত করে চলেছে দিনের পর দিন। নানা কারণে মানুষ আজ জাতীয়তা অপেক্ষা আন্তর্জাতিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একটি দেশ সহজেই পৃথিবীর অন্যদেশের সংস্কৃতির সংবাদ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে পারছে। সুতরাং বলা যায় যে, মানব জীবনে চলচ্চিত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
No comments:
Post a Comment